Saturday, March 19, 2022

ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও কিছু মানুষ কেন কখনোই মিশুক হতে পারে না?


লিখেছিঃ ২০২১ এর ২৩ জুলাই

লেখার স্থানঃ গাবতলী, বেতাগী, বরগুনা 


তুন কারও সাথে কথা বলা শুরু করার পরে ক্লোজ হওয়ার জন্য দুজনেরই একটা বাঁধা অতিক্রম করতে হয়; যাকে বলে 'আইস ব্রেকিং স্টেইজ' (Ice Breaking)। এটা যেকোনো ধরণের মানুষের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে; যেমনঃ বন্ধু-বান্ধবী / আত্মীয়-স্বজন / শিক্ষক-ছাত্র / অন্য কেউ।

কোনোভাবে এই স্টেইজটা পার হয়ে গেলেই কথা বলতে কারও মধ্যে আর কোনো হীনমন্যতা কাজ করে না, নির্দ্বিধায় যেকোনো কিছু বলে ফেলা যায়। উভয়ে কথা বলতে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, দুজনের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা ও পারস্পরিক সম্পর্ক অনেক দৃঢ় হয়ে যায়।


কিন্তু আইসব্রেকিং মোমেন্ট'টা একেবারে সহজ কোনো বাঁধা না। কেউ কেউ মুহূর্তের মধ্যেই এটা অতিক্রম করে ফেলতে পারে। আবার কারও ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলার পরেও আইস আর ব্রেক হতে চায় না।


সাধারণত যারা একটু ইন্ট্রোভার্ট (Introvert) ন্যাচারের (মানে- কম কথা বলে, যা কিছু বলে অনেক ভেবে-চিন্তে বলতে হয়) তাদের ক্ষেত্রে এই আইস ব্রেকিং জোন পার হওয়াটা খুবই কঠিন।


তারা কারও সাথে কথা বললে- "কেমন আছেন?", "বাসার সবাই কেমন আছে?", "কোথায় যাচ্ছেন?" -এই টাইপের কিছু সেনটেন্স এর বাহিরে আর তেমন কিছুই বলতে পারে না। অর্থাৎ তাদের জন্য নতুন কারও সাথে ক্লোজ হওয়া অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। দেখা যায়- একেবারে সুপরিচিত গুটিকয়েক জন বাদে তারা অন্য কারও সাথে মাত্র ৩/৪ টি সেনটেন্স এর বাহিরে আর কিছুই বলতে পারে না। অধিকাংশ কথা মনের ভিতরেই থেকে যায়, আর প্রকাশ করা হয় না। অথচ তারা যে কথা বলতে চান না, বিষয়টা কিন্তু এমনও না। তাই তাদের জন্য কারও সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে অনেক সময় লাগে।


ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এই টাইপের মানুষদের সাথে অধিকাংশ মানুষের একটা কমিউনিকেশন গ্যাপ সৃষ্টি হয়ে যায়। এসব মানুষকে সবাই একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে। কেউ কেউ মনে করে- "এরা বেশি কথা বলে না, তার মানে তারা সবসময় ডন্ট কেয়ার মুডে থাকে। অহংকার / হিংসা বেশি।"


আসলে ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যায়, তারা ফেইস টু ফেইস কমিউনিকেশনে ন্যাচারাল ভাবেই একটু উইক থাকে। চেষ্টা করা স্বত্বেও ভালোভাবে পেরে উঠে না।
অথচ, সবাইকে যে সব বিষয়ে এক্সপার্ট থাকতে হবে এরকম কোনো নীতিমালাও নেই। দেখা যায়, কেউ ঘন্টার পর ঘন্টা ফ্লুয়েন্টলি উঁচু গলায় বক্তৃতা দিয়ে যেতে পারে, অথচ মাত্র ১০টা লাইন শুদ্ধ বাংলা লিখতে পারে না। আবার কেউ হাজার হাজার লাইন প্রমিত ও সাবলীল ভাষায় অর্থবহ বাংলা / ইংলিশ লিখে যেতে পারলেও, ১০ জনের সামনে স্পষ্টভাবে ২ মিনিট কথা চালিয়ে যেতে পারে না।

তাই এটা সবারই মেনে নেয়া উচিত যে, সৃষ্টিকর্তা সবার মধ্যে সব গুণাবলি দিয়ে দেন না। আর কাউকে গুটিকয়েক কাজ বা কথাবার্তা দিয়েও বিচার করা ঠিক না। তার যোগ্যতার প্রকৃত সীমা যাচাই করতে সর্বাঙ্গীণভাবে বিচার করা উচিত।
অথচ, সমাজের কথিত কিছু জ্ঞানী মানুষও ভুল উপায়ে মানুষ যাচাই করে যাচ্ছে...

Share: