এখন শুধুমাত্র তাহার মস্তক খানা কর্তন বাকী। গ্রীবা হইতে চরণ অব্দি বক্ষ, উদর, হস্ত, হৃৎপিন্ড, ফুসফুস, কলিজা সহ দেহের প্রতিটা অঙ্গানুই একটা একটা করিয়া কর্তন সম্পন্ন হইলো। ইদে পশু জবেহ করিবার সেই ধাঁরালো ছুরিখানা দিয়াই এই ভয়ানক - দূঃসাহসিক কান্ড খানা ঘটিয়া ফেলিলো মাত্র ২২ বৎসরের এক তরুন বালক!
অতঃপর?
মানুষটার টুকরো টুকরো কর্তিত অঙ্গানুগুলির রক্তের প্রবাহ বহিতেছে মৃত্তিকা জুড়ে; আর সেখান হইতে বালকটা স্ব-হস্ত দ্বারা খানিকটা রক্ত তুলিয়া ঐ অবশিষ্ট মস্তকখানির মুখগহব্বরে ঢালিয়া দিলো। আর ক্রোধান্বিত চক্ষু নিয়া সশব্দে কহিতে লাগিলো -
"তোর এই নষ্ট মুখ খানা দিয়া অগণিত নীরিহ মানবকে কতই না করিয়াছো গালমন্দ; ইহা আমি আর হইতে দিবো না। অর্থের তীব্র লোভে মনুষ্যত্ব ভুলিয়া মুখের নোংরা ব্যবহার প্রদর্শন করিয়া, যে রক্ত-মাংস গড়িয়াছিলি, এখন সেই নিজের রক্ত নিজেই খা।"
এইবারে, বালকটা একখানা গর্ত করিয়া লেলিহান আগুনের মধ্যে উনার দেহের সবগুলি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একটা একটা করিয়া ফেলিতে লাগিলো; আর মনের গহীনে তীব্র প্রতিশোধের আগুনকে কিঞ্চিৎ শান্ত করিবার চেষ্টা করিলো। এখন শুধু অবশিষ্ট রহিয়াছে মস্তকখানি আগুনে ফেলিবার।
এরই মধ্যে এক পথচারীর নিকট বালকের এই ভয়ানক কর্মকাণ্ড দৃষ্টিগোচর হইলো। তৎক্ষণাৎ তিনি ঘটনাস্থলে আসিয়া নির্বাক বিস্ময়ে তরুণ-কে এই নির্মম কর্ম ঘটানোর হেতু জিজ্ঞাসা করিলেন।
- "হে বালক, কী ত্রুটি ছিলো উনার? উনি কি কাহারো প্রাণনাশ করিয়াছে?"
- "না।"
- "তাহলে উনি কি কাউকে ধর্ষণ করিয়াছে?"
- "না।"
"তাহলে কেন তুমি এই নির্মম কর্মখানা করিতেছো?"
তরুণ বালক মাত্র কয়েকখানা বাক্যে সংক্ষেপে উত্তর সমাপ্তি করিবার চেষ্টা করিলো।
কহিলো,
"আপনার জিজ্ঞাসিত উপরোক্ত কোনো অন্যায়কারীর বিরুদ্ধেই আমি এত্তবড় প্রতিশোধের স্বাদ নিতাম না। উনার অন্যায়টা চলমান সমাজ ব্যবস্থায় আপনাদের নিকট স্বাভাবিক বোধ হইলেও, নীরিহদের উপর ইহার নির্মম প্রভাব আমি প্রত্যক্ষরুপে অনুভব করিতে পেরেছি।"
- "তো, বলো হে বালক, উনার অন্যায় খানা কী?"
- "আচ্ছা, বলিতেছি। উনার গুরুতর ৩ খানা অন্যায় ছিলো। যাহার প্রধাণ উৎস ছিলো 'সুদ'।"
১. "উনি ব্যক্তি সুদের ব্যবসা করিতেন।"
২. "সুদের দ্বারা তিল তিল করিয়া আসলের অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের পরও আসল এর দাবি ছাড়িতেন না। বরং নীরিহ'র স্ব-পরিবারকে ভয়ানক বিপদে ফেলিবার নানা ষড়যন্ত্র রচনা করিতেন।"
৩. "ইনি শুধুমাত্র অর্থের স্বার্থে মানবকে যেকোনো ধরণের মিথ্যা অপবাদ প্রদানে কিঞ্চিৎ দ্বিধা করিতেন না।"
তরুন বালক দ্রুত উত্তর সমাপ্তি করিয়া আবারও উক্ত কর্মকাণ্ড আরম্ভ করিয়া দিলো। কারন এখন অবশিষ্ট কর্তিত মস্তকখানি আগুনে ফেলিতে হইবে...
ইতোমধ্যেই, হঠাৎ করিয়া বালকটির কর্ণে ভাসিয়া উঠিলো, "এই ছেলে, তাড়াতাড়ি উঠ, এতো ঘুমাও কেন? তুই নাকি আজ কোথায় যাবি?!"
চক্ষু খুলিয়া অতঃপর বালকটার বোধগম্য হইলো, এতক্ষণ ধরিয়া তাহার ভয়ানক কর্মকান্ডটি নিদ্রারত স্বপ্ন বৈকি আর কিছুই ছিলো না। কিন্তু বালকটা দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে হতাশার তীব্র নিঃশ্বাস ফেলিয়া কহিতে লাগিলো-
"আহ! কেন ইহা বাস্তব না হইয়া স্বপ্ন হইলো? শুধুমাত্র আমার ধর্মগ্রন্থে যদি এইরুপ প্রতিশোধ নেয়ার বিধান থাকিতো, তাহলে আমি যেকোনো মূল্যে পশুতুল্য উক্ত অমানবদের শাস্তি প্রদানে এই নির্মম পেশাটি-ই বাছিয়া নিতাম। তাহাতে আমি কাউকেই পরোয়া করিতাম না।"
পরিশেষে তরুণ বালক কোনো উপায়ন্তর না পাইয়া তাহার সৃষ্টিকর্তার আদালতেই এই বিচার সমর্পণ করিলো...