Saturday, September 10, 2022

সুখ পরিমাপের স্কেল ও সুখী হওয়ার আফ্রিকান পদ্ধতি

'Ubuntu' is going to die..!

একজন মানুষ এই মুহুর্তে ঠিক কতটুকু হ্যাপি, সেটা পরিমাপ করার কোনো যন্ত্র বা স্কেল এখনও (সম্ভবত) আবিষ্কৃত হয়নি। যেমন, আমরা সবাই-ই বলি, আমি একজন সুখী বা অনেক সুখী বা হাজার গুণে সুখী মানুষ। কিন্তু এই 'অনেক' বলতে ঠিক কতটুকু সুখী সেটা কিন্তু সঠিকভাবে কেউ বলতে পারি না।

আপনিও বললেন "অনেক হ্যাপি", আর আমিও বললাম "অনেক হ্যাপি"। তাহলে যদি জিজ্ঞাসা করি, আপনার আর আমার মধ্যে তুলনামূলক কে বেশি হ্যাপি? এটার সঠিক উত্তর কিন্তু অসম্ভব। 

যেমনটা আমরা বলতে পারি, আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৪° ফারেনহাইট; যা নির্দিষ্ট। কিন্তু হ্যাপিনেস পরিমাপের জন্য সেরকম কোনো স্কেল এখনও নেই। 

ধরুণ, 'Happiness Measuring Scale' নামে সেরকম একটি স্কেল বের হলো। যার সর্বোচ্চ মাত্রা ১০০ ডিগ্রি একক। যেমন, আমি এখন ঠিক কতটুকু হ্যাপি সেটা একটা ডিভাইস দিয়ে বুঝতে পারলাম যে ২০° একক বা ৫০° একক বা ৮০° একক হ্যাপি, ইত্যাদি।

এখন, আমি ২ ধরণের মানুষ সম্পর্কে ধারণা দিবো। 

Type-1: এই ধরণের মানুষ শুধুমাত্র নিজেকে এবং নিজের স্ত্রী-সন্তানদের স্বার্থে যেকোনো কাজ করতে অভ্যস্ত। অর্থাৎ তার পরিবারের সদস্যরা ভালো থাকলেই তিনি হ্যাপি থাকেন। আশেপাশের অন্য আত্মীয় বা অন্য মানুষের কষ্ট-ক্লেশে তার কোনো অনুভূতি জাগ্রত হয় না। তার কাছে ১০০ টাকা থাকলে সম্পূর্ণটা এই সদস্যদের জন্য ব্যয় করেই হ্যাপি থাকেন। 

Type-2: এই ধরণের মানুষ নিজের পরিবার ছাড়াও আশেপাশের আত্মীয় বা অনাত্মীয় বা প্রতিবেশি, সকলকে নিয়ে ভালো থাকতে পছন্দ করেন। অর্থাৎ তার কাছে ১০০ টাকা থাকলে আশেপাশের ২০ জনকে ৫ টাকা করে দিয়ে হলেও হ্যাপি থাকেন। 

এখন, এই দুই প্রকৃতির মানুষকে যদি ঐ Happiness Scale দিয়ে পরিমাপ করি, তাহলে কার হ্যাপিনেস কত ডিগ্রি হবে বলে আপনার মনে হয়?

Type-1 এর হ্যাপিনেস এসেছে শুধুমাত্র ৩-৪ জন মানুষের হ্যাপিনেস থেকে। অন্যদিকে Type-2 এর হ্যাপিনেস এসেছে ২০ জন মানুষের হ্যাপিনেসের সমষ্টি থেকে। ২০ টা মানুষ Happiness Scale অনুসারে ন্যূনতম ৪ ডিগ্রি করে হ্যাপি হলেও সব মিলিয়ে ৮০ ডিগ্রি হ্যাপিনেস হয়ে যায়। অন্যদিকে Type-1 এর হ্যাপিনেস সব মিলিয়ে ৫০ ডিগ্রির উপরে ওঠার কথা না। 

অথচ, Type-1 এর মানুষ এটাই ভাবে যে, তারা মনে হয় সবচেয়ে হ্যাপি। কারন সে স্বজনপ্রীতিতে সফল। 

কিন্তু এর চেয়েও যে অনেক গুণে বেশি হ্যাপি হওয়া সম্ভব সেটা তারা হয়তো অনুভব-ই করতে পারেনি। করবেই বা কিভাবে? Happiness Scale নামক কোনো স্কেলের অস্তিত্ব তো নেই!

তবে এই স্কেল না থাকা সত্বেও কিছু মানুষ কিন্তু ঠিক-ই এই হাইব্রিড হ্যাপিনেস এর ফরমুলাটা বুঝে নিয়েছে। তাই-ই তো এ যুগেও স্বল্প কিছু মহানুভবের দেখা মিলে।

আফ্রিকায় প্রাচীণ একটি শব্দ হচ্ছে উবুন্তু (Ubuntu); যার অর্থ হলো, "I am, because we are". অর্থাৎ "আমি আছি, কারন আমরা সবাই আছি"।

নিগ্রো আফ্রিকানদের আমরা অশিক্ষিত বা যাযাবর মনে করলেও তারা কিন্তু ঠিক-ই এই Ubuntu এর মূল্য অনেক আগেই বুঝে গিয়েছে এবং শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ সবাই সর্বদা এ রীতি মেনে চলার চেষ্টা করে। 

কিন্তু বাংলাদেশে এই Ubuntu -র অস্তিত্ব কতটুকু যে আছে, তাতে আমি সন্দিহান। এজন্যই হয়তো এ দেশে ধনী-গরীব এতো বৈষম্য..!

Share: